নিজস্ব প্রতিবেদক
গাজীপুর সদর উপজেলার মনিপুর বিটের আওতাধীন বেগমপুর, ভবানীপুর নয়াপাড়া এবং নৌওলাপাড়া এলাকায় বনভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা দুই শতাধিক বসতবাড়ি ও স্থাপনা উচ্ছেদে এক বিশাল যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এই অভিযানে বনভূমি জবরদখল করে গড়ে ওঠা অসংখ্য অবৈধ নির্মাণ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা প্রায়শই স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের অধীনে মনিপুর, নয়াপাড়া এবং বেগমপুর গ্রামে এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। তার সাথে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, আনসার এবং বন বিভাগের চার শতাধিক সদস্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও অভিযানে সহযোগিতা করেন। এই বিশাল সংখ্যক বাহিনীর উপস্থিতি অভিযানের গুরুত্ব ও কঠোরতা নির্দেশ করে।
গাজীপুর রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল রানা জানান, গত ৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরপরই গাজীপুর রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের অধীনে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অসংখ্য অবৈধ বসতবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল। এর ফলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের একটি বিশাল অংশ বেদখল হয়ে যায়, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। বনভূমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর গত ৫ই আগস্টের পর থেকে বনাঞ্চলের বনভূমি জবরদখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বসতবাড়িগুলো চিহ্নিত করা হয় এবং উচ্ছেদের জন্য আবেদন করা হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ এই প্রসঙ্গে বলেন, “গত ৫ই আগস্টের পরপরই সংরক্ষিত বনভূমি জবরদখল করে গড়ে তোলা প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বনভূমির বিস্তীর্ণ অংশ জবরদখলমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই অভিযানে প্রায় চার শতাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিরলসভাবে সহযোগিতা করেছেন।
বিক্ষুব্ধ জনতার সড়ক অবরোধ বন বিভাগের এই উচ্ছেদ অভিযানের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকার সাধারণ জনগণ। নৌওলাপাড়া আঞ্চলিক রাস্তায় জড়ো হয়ে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং সড়ক অবরোধ করে রাখে। তাদের অভিযোগ, এই উচ্ছেদ অভিযানের ফলে তারা তাদের আশ্রয় ও জীবিকা হারিয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা না করেই এই ধরনের অভিযান পরিচালনা করায় তারা চরম দুর্দশার শিকার হচ্ছেন বলে জানান। এই পরিস্থিতিতে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
এই উচ্ছেদ অভিযান একদিকে যেমন সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে জবরদখলমুক্ত করেছে, তেমনই অন্যদিকে স্থানীয় দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। ভবিষ্যৎ পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট নীতি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উপরই এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নির্ভর করছে।
মণিপুর বিটের বনভূমি থেকে কিছু অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলার জন্য বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাধুবাদ জানাতেই হয়,তবে উচ্ছেদ অভিযানের সময় বন বিভাগের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কর্মচারীদের কথা প্রকাশ পেয়েছ। এ সব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি যারা দিয়েছিলেন তারা কী লজ্জা পাননি? বিষয় টি এতো দিন গোপন থাকলেও এখন কিন্তু তা জনসাধারণের কাছে প্রকাশ পেয়েছে,আগামিতে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কি লজ্জা ও ভয়ে ওইসব স্থানে সহসা যেতে পারবেন? যদি বন বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে দুর্নীতি বন্ধ করতে পারে অথবা নিজেদের মধ্যে সততা থাকে তাহলে বন এলাকার সাধারণ মানুষ কখনও সরকারি কাজে বাধা দিতে আসবে না বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী।